অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই, প্রেমের কারণেই মুসলমান হয়েছিলেন প্রবীর মিত্র
খ্যাতিমান অভিনেতা প্রবীর মিত্র মারা গেছেন। আজ রবিবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে রাজধানীর একটি বে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু বরণ করেন। তার ছোট ছেলে সিফাত ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।৮২ বছর বয়সী প্রবীর মিত্র বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা নিয়ে ১৩ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শরীরে অক্সিজেন–স্বল্পতাসহ বেশ কিছু অসুস্থতায় গত ২২ ডিসেম্বর তাঁকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। প্রবীর মিত্রের পুত্রবধূ সোনিয়া ইসলাম জানিয়েছেন, রাতে গোসল শেষে ফ্রিজার গাড়িতে প্রবীর মিত্রের লাশ ধানমন্ডির বাসায় রাখা হবে। আগামীকাল জোহরের নামাজের পর এফডিসিতে প্রথম জানাজা হবে। এরপর চ্যানেল আইতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে। ১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। তাঁর পুরো নাম প্রবীর কুমার মিত্র। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন। স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি।১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম প্রবীর মিত্র ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। যদিও চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করেও তিনি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। প্রবীর মিত্র তার বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবনে নায়ক হিসেবে হাতেগোনা কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকায় প্রথম ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ নির্মিত হয়। সেটি ছিল সাদাকালো ছবি। সেই ছবিতে আনোয়ার হোসেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা চরিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তী সময়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার বেশ কয়েক বছর পরে রঙিন ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ নির্মিত হয় আর এই ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ পান প্রবীর মিত্র। অসাধারণ অভিনয়ের জন্য দেশজুড়ে তিনি প্রশংসিত হয়েছিলেন।
১৯৭০ থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে জীবন তৃষ্ণা, রক্ত শপথ, জলছবি, ‘তিতাস একটি নদীর নাম, মধুমিতা, সেয়ানা, জালিয়াত, রক্তের ডাক, ফরিয়াদ, চরিত্রহীন, জয়পরাজয়, ‘অঙ্গার’, মিন্টু আমার নাম, ফকির মজনু শাহ, অনুরাগ, তরুলত, গায়ের ছেলে, পুত্রবধূ প্রভৃতি।১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রবীর মিত্র অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে নৌ চোর, সুখে থাকো, সোনারতরী, ‘ঘর ভাঙা ঘর, সুখের সংসার,প্রতিহিংসা, আরশীনগর, ‘মানসম্মান, চেনামুখ, আঁখি মিলন, রসের বাইদানী, অপমান, চ্যালেঞ্জ, ফেরারী বসন্ত, মন পাগলা,জিপসি সর্দার, ‘দহন’, মায়ের দাবি, ‘রানী কেন ডাকাত’, ‘বেদেনীর প্রেম’ প্রভৃতি।
প্রবীর মিত্র অভিনয়ের জন্য ১৯৮৩ সালে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। বাংলা চলচ্চিত্রের খ্যাতনামা অভিনেতা প্রবীর মিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন প্রেমের কারনেই, আর এ বিষয়টি তার মৃত্যু সংবাদে ফের আলোচনায় এসেছে। যদিও তিনি মুসলমান ছিলেন, তথাপি তার পরিচিত নাম প্রবীর মিত্রই ছিল, যা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে —আসলেই তিনি কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন কি? শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর জানান, প্রবীর মিত্রের জানাজা শেষে ঢাকা আজিমপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে। প্রবীর মিত্রের ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তার নামের কারণে। এ সম্পর্কে মিশা সওদাগর স্পষ্ট করে বলেন, “প্রবীর মিত্র মুসলমান ছিলেন। তার জানাজা ও দাফন ইসলাম ধর্মের নিয়মে হবে। ইতোপূর্বে সাক্ষাৎকারে প্রবীর মিত্র নিজেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমি তো কনভার্ট হয়ে ওর (স্ত্রী) মা’কে বিয়ে করেছিলাম। তখন আমি মুসলমান হয়েছিলাম এবং আজও সে ধর্মেই আছি।” প্রবীর মিত্রের স্ত্রী অজান্তা মিত্র ২০০০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের ৩টি ছেলে—মিথুন মিত্র, সিফাত ইসলাম, এবং সামিউল ইসলাম—এবং এক কন্যা ফেরদৌস পারভীন। তাদের মধ্যে সামিউল মারা গেছেন। প্রবীর মিত্র ১৯৪১ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জলছবি’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে তিনি অসংখ্য চলচিত্রে অভিনয় করেছেন।